ভালো ব্যবহারেরও কি সীমা আছে?
.png)
ভালো ব্যবহারেরও কি সীমা আছে?
- মুহাম্মাদ আল-আমিন খান
ভালো ব্যবহার কাকে বলে? ভালো ব্যবহারের কোনো সীমা নেই, অপরকে আকাশচুম্বী ভালো
ব্যবহার দেওয়া যায়। তবে কেউ যদি খরাপ ব্যবহার করে তাহলে? কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথে ঠিক ততোটুকু খারাপ ব্যবহার করাই এক ধরণের
ভালো ব্যবহার। আপনি বলতে পারেন যে, কেউ খারাপ ব্যবহার করলেও আপনি
তার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। ভালো কথা। তবে সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার, এমনকি ভালো ব্যবহারেরও। আর এই সীমাটা হলো- যতোক্ষণ ও যতোটুকু কেউ ভালো ব্যবহার
করবে, ঠিক ততোক্ষণ ও ততোটুকু ভালো ব্যবহার সে পাবে। তবে এ কথাটা কতোটুকু যৌক্তিক? বলতে পারেন যে, মহৎ গুণের কোনো সীমা থাকা উচিত নয়। আসলে এটাই সবাই বলবে। মহৎ গুণ মানুষের
মধ্যে যতো বেশী থাকবে দুনিয়ায় শান্তি ততো বেশী প্রসারিত হবে। এটাই তো যুক্তিযুক্ত।
তাই না?
আসলে দুনিয়া বড় বন্ধুর পথ। এখানে মহৎ গুণ যে যতো
দেখাবে সে ততো বেশী বিপদে পড়বে। তাকে ততো বেশী লাঞ্চনা বঞ্চনা
সইতে হবে। আপনি যদি পারেন আপনার সব মহৎ গুণের দ্বারা দুনিয়া আলোকিত করবেন তবে আপনি
মহামানব। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই অনেক অপমান ও অত্যাচার সহ্য করতে হবে। আপনি সমাজে একটা ভালো কাজ করতে গেলে প্রথমেই আপনাকে একটা হাসির পাত্র হতে হবে।
কারণ আমাদের সমাজের অধিপতিরা খুবই নিকৃষ্ট জাত। এরা কারো ভালো কাজে প্রথমেই
নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সমাজের ঐ ধনী শ্রেণিরা ধনে বড় হলেও তাদের হৃদয় খুবই
সংকুচিত। তারা বর্বর, অসভ্য ও ইতর। আর সমাজের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই। একটা ভালো কাজ, ভালো একটা সিদ্ধান্ত, নৈতিকতা যুক্তি ও আইনের মিলন
ঘটিয়ে যে কোনো একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আপনি আপনার পরিবার থেকেও বাধার শিকার
হবেন। আপনার পরিবারেও কোনো একজন সদস্য আছে যে কিনা আপনার ভালো কাজে উৎসাহ না দিয়ে বরং আপনাকে সারাক্ষণ নিরুৎসাহিত করে। এদের
জন্যেই জাগ্রত সচেতন মানুষের নেতৃত্বে পরিবার ও সমাজ এগিয়ে যেতে পারছে না। তবে আজই প্রয়োজন অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে
তোলা।
যদি আপনি সবদিক থেকে ভালো হতে চান তবে অসাধু
সংখ্যাধিক্যের মধ্যে অচিরেই আপনার ধ্বংস অনিবার্য। কথাটা কিন্তু মোটেই ভুল নয়।
কারণ অনেক ভালো মানুষ আছে যারা ভালো কাজ করতে যেয়ে, ভালোর পক্ষে কথা বলতে যেয়ে
হাজারো শত্রু বানিয়ে ফেলেছে। এই শত্রুরা ঠিক ইবলীশ শয়তানের মতো! আসলে আমরা দেখতে
পাই যে- যারা সমাজে প্রতারক, ভন্ড, মিথ্যাবাদী, লোভী, মোনাফেক, বেঈমান, দূর্নীতিবাজ তারাই সবচেয়ে ভালো আছে। তাদের লোকেরা সালাম দেয়, সম্মান করে, বড় চেয়ার ছেড়ে দেয় বসতে। তারা সমাজের নেতা হয়ে যায়। আর যারা নীতি, যুক্তি ও আইনের ধার ধারে, সত্যভাষী, ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান, দূর্নীতিবাজ নয় তারাই খারাপ আছেন। তারা নিগৃহিত ও অপমানিত। সব দিক দিয়ে যারা ভালো তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তাদের মিথ্যা অপবাদও ঘাড়ে নিতে হয়। এমনকি আপনি যদি অতিরিক্ত
ভালো হয়ে চলতে চান তাহলে আপনার কোনো অস্তিত্বও থাকবে না এ দুনিয়ায়। অসাধু
সংখ্যাধিক্যে আপনি হারিয়ে যাবেন। এখন কথা হচ্ছে-
অতিরিক্ত ভালো হলে কি সত্যিই ধ্বংস হতে হবে? আসলে তেমনটিও নয়। যুক্তি, নীতি ও আইন এই তিনটার মাধ্যমে
আমরা আমাদের জীবনের যে কোনো সমস্যার সমাধান বের করতে পারি। সবক্ষেত্রে যুক্তি, নীতি ও আইন মেনে চলতে হবে। তার পরেও যদি কোনো আঘাত আসে তবে সেটা মোকাবেলা করা
সহজ হবে। কারণ যুক্তি, নীতি ও আইন এই তিনটিই আপনাকে রক্ষা করবে।
অপরের সব ধরণের অনাকাঙ্খিত আচরণ থেকে রক্ষা পেতে
হলে অনধিকার চর্চা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যেখানে কথা বলা আপনার অধিকার নেই, আগ বাড়িয়ে সেখানে কথা বলতে গেলেই আপনি এমন আচরণ পেতে পারেন যা আপনার কাছে
অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত মনে হতে পারে। যদিও আপনি ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই সেখানে
গিয়েছিলেন। যেমন ধরুন-কাউকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সত্য ও সুন্দরের জ্ঞান দিতে
গেলেন। কিন্তু তিনি জ্ঞান ও জ্ঞানীর প্রতি অহংকারী। তাহলে ভাবুন- আপনাকে কতোটা
তাচ্ছিল্য করা হবে। আবার কিছু ভালো কাজও আছে ঝুঁকিপূর্ণ যা মিথ্যা অপবাদে
মান-ইজ্জত নষ্ট করে ফেলতে পারে, ফেতনা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন
ধরুন- রাস্তায় কোনো মেয়ে পা পিছলে পড়ে গেছে, আর আপনি তাকে ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই টেনে তুলতে গেলেন। অমনি এমন কোনো মিথ্যা
অপবাদ অথবা অন্য কোনো ঝামেলায় আপনি পরে যেতে পারেন। তাছাড়া অর্থ-সম্পদ
ধার দেওয়া আজকাল বড় ঝামেলার কারণ। কাউকে যেচে টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগীতা করতে গেলে
ওই সম্পদ প্রতিশ্রুত সময়ে ফেরত পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা প্রয়োজনে মিথ্যা ও
মিষ্টি কথা বলে মানুষ নেয়। ফেরত দেবার সময়ে গ্রহিতার খোঁজ থাকে না। এদিকে দাতার
চপ্পল ক্ষয়ে যায়। কড়া সুরে চাইতে গেলে বরং চপ্পলাঘাতও খেতে হয়। তাই এমন কিছু কিছু
ক্ষেত্রে নিজেকে সরিয়ে রাখা জরুরী। অর্থাৎ উপকার করার আগেও ভাবতে হবে
আপনাকে। কিছু কিছু উপকার আছে যেগুলো করতে এগিয়ে যেতে নাই। এই সমাজ সংসারে যারা
অপরের উপকার কম করে তারাই দেখি বেশি ভালো থাকে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের উপকার
করতে গেলে তারা আপনাকে শত্রু মনে করবে। মনে করবে আপনি তাদের ক্ষতি করতে এসেছেন।
তাই এ ধরণের উপকারের কি দরকার আছে? তবে খুব ধৈর্য, সাহস ও ত্যাগের মনসিকতা থাকলে এসব ক্ষেত্রেও এগিয়ে যান। কেননা জীবন একটাই, তাই মানবের তরে আপনাকে দিন বিলিয়ে।
প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে, কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথে ততোটুকু খারাপ ব্যবহার করা যায়। হ্যাঁ আপনি
খারাপ ব্যবহার না করেই বা কিভাবে টিকে থাকবেন? কেউ খারাপ ব্যবহার করলো আর আপনি মুখ বুঝে থাকলেন, এটা করলে সে আরো পেয়ে বসবে। তখন জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠবে। তাই যে যতোটুকু খারাপ ব্যবহার
করবে তাকে ঠিক ততোটুকু দিয়ে দিন। তবে খেয়াল রাখবেন বেশী না হয়। আর আপনার সাথে কেউ ভালো ব্যবহার করলো, বিনিময়ে আপনি তার সাথে খারাপ
ব্যবহার করে দিলেন। তাহলে তাঁর হৃদয় ভেঙ্গে যেতে পারে। হৃদয় ভাঙ্গার মতো বড় পাপ আর
কি হতে পারে? যদি কেউ এভাবে ভালো ব্যবহার করার বিপরীতে খারাপ ব্যবহার করে আপনার হৃদয়ে আঘাত
হানে তবে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি হাসুন হৃদয় ভরে। আপনি ধরে নিন, ভালো ব্যবহার করলে প্রতিদানে খারাপ ব্যবহার পেতেই হয়। তারপরেও আপনার দায়িত্ব
কাজ আপনি করে যাবেন। কে কি ভাবলো, কে কি বললো সেটা চিন্তা না
করে আপনি ভালোর পথে এগিয়ে যান। কেউ আপনার মূল্যায়ন না করলেও মহান আল্লাহ তা করবে। আবার দুনিয়ায়ও আপনি কোনো একজন ভালো মানুষের
মূল্যায়ন পেতেও পারেন।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ব্লগার মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Amin Blog এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে Amin Blog এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান , লেখক ও ব্লগার
Comments
Post a Comment