স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি


স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি

- মুহাম্মাদ আল-আমিন খান


বৈবাহিক সম্পর্ক টিকে থাকে কিসের উপর ভিত্তি করে? কোথায় ভুল হলে এ সম্পর্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছিন্ন হয়ে যায়? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর না জেনে, না বুঝে দাম্পত্য জীবন চলে না।                      

একটা ছেলে বা মেয়ে চারিত্রিক দিক দিয়ে খারাপ হলে অথবা স্বজনদের সাথে নেতিবাচক আচরণ করলেও তার মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কোনো রক্তের বন্ধনের আত্মীয়ের কাছে সে ওই সম্পর্ক দ্বারাই চিরদিন আবদ্ধ থাকে। সাময়িক তিক্ততা তৈরী হলেও রক্তের ওই সম্পর্ক কখনোই চিরতরে ছিন্ন হয়ে যায় না।

কিন্তু একটা মাত্র সম্পর্ক আছে যেটা জৈবিক ও রক্তের মাধ্যমে তৈরী না হলেও, সেই সম্পর্ক চিরদিন বহু জৈবিক ও রক্তের সম্পর্ক তৈরী করে চলে। আর সেটা হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সামাজিক ভিত্তি হলো- বিবাহ। আর এ সম্পর্কের মনস্তাত্বিক ভিত্তি হলো- বিশ্বাস।

আর এ বিশ্বাসের মূলে আছে যৌনতার সম্পর্ক, যা একে অপরের কাছে আমানত স্বরূপ। স্ত্রীর দেহ ও মন স্বামীর জন্যে, স্বামীর দেহ ও মন স্ত্রীর জন্যে। বৈধ উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করে ওই দেহ-মন অন্যকে বিবাহের মাধ্যমে দেওয়া যায়। তবে বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় কোনো স্বামী বা স্ত্রী যদি অবৈধভাবে অন্যকে তার দেহ-মন দান করে তাহলে তা হবে চরম অন্যায় ও জুলুম।

পারস্পারিক বিশ্বাস ভেঙ্গে কেউ যদি ওরকম করে তাহলে তা হবে নিজের ভাই বা বোনের সাথে অবৈধ সম্পর্কের সমতুল্য অপরাধ। কোনো স্বামী বা স্ত্রী যদি নিজ সঙ্গীকে কাগজে-কলমে রেখে অন্যকে দেহ ও মন দান করে, তাহলে আমি মনে করি- ঐ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সয়ংক্রিয়ভাবেই ছিন্ন হয়ে যায়, কাগজে-কলমে আর ছিন্ন করা লাগে না।

স্বামী অথবা স্ত্রী যিনি ভুলের মধ্যে আছেন, অপরজন হয়তো তার দাম্পত্য সঙ্গীর গোপন কাহিনী সম্পর্কে অবগত নন। অর্থাৎ গোপনে পরকীয়া? আর তাই ভাবছেন সব ঠিকঠাক আছে। নাহ! কিছুই ঠিক নেই, বরকত উঠে গেছে, ভালোবাসা উঠে গেছে। ধ্বংস এসে গেছে। আবার সব জানা-বোঝার পরেও কঠিন শর্তের কাবিননামা তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এও হতে পারে যে সন্তানদের মায়া অথবা দীর্ঘদিনের সাজানো সংসারের মায়া তাদের এক ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। তবে এক সাথে থাকার পরেও বিশ্বাস ভাঙার ভুলে ওই দাম্পত্য সম্পর্কে যে ফাটল ধরেছে তা আর কিছুতেই জোড়া লাগবে না। যদিও কাবিননামা এখনো টিকে আছে, তবে আমি বিশ্বাস করি- এ এক প্রকার মহাবিচ্ছেদ।

অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি রয়েছে পারস্পারিক যৌনতার আমানত রক্ষার মধ্যে। এই একটা প্রশ্নেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, টিকেও থাকে এই প্রশ্নে। আর এক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলে তা আর টিকে থাকে না।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিটা কি একটা কাগজে-কলমের কাবিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি দশ লাখ, বিশ লাখ মোহরানায়? তা কিছুই নয়! এ সম্পর্কের একমাত্র ভিত্তিটা হলো যৌনতার বিশ্বাস। কারণ মোটা অংকের মোহরানা দিয়ে তালাক ঠেকানো যায়, কিন্তু স্বামীর মন পাওয়া যায় না, ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

কোনো নারী তার স্বামীর বিশ্বাস ও আমানত খেয়ানত করলে একজন পুরুষ ঘটনাক্রমে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে চিরদিন থাকতে পারবে। কারণ সে পুরুষ! সে তার স্ত্রীর বিশ্বাসপূর্ণ ভালোবাসার কাছে আবদ্ধ, কাবিননামার কাছে নয়। কাবিননামা তার কাছে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়। সে পুরুষ ওই কাগজের সম্পর্ক এক টানে ছিঁড়ে ফেলতে জানে।

আবার কোনো পুরুষ নিজ স্ত্রীকে ঘরে রেখে অপর নারীর সাথে জঘন্যতায় মেতে থাকলে তার চেয়ে কাপুরুষত্বের নজির আর নেই। নেক নারীরা একজন পুরুষের ঘর করে, কাপুরুষের নয়। কোনো নোংড়া পুরুষের ঘরে একজন নেককার নারী থাকতে পারে না। এ ধরণের অশ্লীল পুরুষকে অভিশপ্ত জীবন উপহার দিয়ে স্ত্রী চিরবিদায় নিলেই তাদের উপযুক্ত শাস্তি হয়।

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Amin Blog এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে Amin Blog এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - লেখক ও ব্লগার, Amin Blog

Comments

Popular posts from this blog

বউয়ের মধু মন্ত্রণার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক