মা-বাবাকে স্ত্রী কাছে রাখতে ও সেবাদান করতে না চাইলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শর্ত
- Get link
- X
- Other Apps
মা-বাবাকে স্ত্রী কাছে রাখতে ও সেবাদান করতে না চাইলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শর্ত
- মুহাম্মাদ আল-আমিন খান
আমি আগেই উল্লেখ করেছি শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত স্ত্রীর ফরজ কর্তব্য নয় বরং তা ছেলের জন্য ফরজ। শরীয়ত সরাসরি পুত্রবধূর ওপর শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের দায়ভার অর্পণ করেনি বরং তা পরোক্ষ ভাবে করেছে। কোনো স্ত্রী যদি স্বামীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় অথবা তার কাজে কর্মে আচরণে প্রকাশ পায় যে শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে কাছে রাখতে পারবে না বা তাদের কাছে গিয়ে থাকতে পারবে না অথবা মা-বাবার সেবা যত্ন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে সে স্ত্রীর জন্য আমি বিকল্প কতগুলো পথ উল্লেখ করছি-
১। আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের সুখ-শান্তিতে রাখার জন্য সারাদিন ভবঘুরের মতো ব্যস্ত সময় পার করেন। তার সেই পরিশ্রমের মূল্য কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে দিতে হলেও আপনি তার বাবা-মায়ের সেবা করতে পারেন। এটা করলে আপনার স্বামী নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় রোজগারে মন দিতে পারবেন। তার ঘরের মা-বাবার সেবা করা নিয়ে তার চিন্তা থাকবে না। এই খেদমত করার মানে এই নয় যে, আপনি নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন করে দিচ্ছেন। বরং নিজের মা-বাবার মতো একই পরিবারে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে মিলেমিশে থাকছেন। প্রয়োজন মতো তাদের ভালোবাসা সাহায্য সহযোগিতা করছেন, এইতো? একজন স্বামী তার স্ত্রীর জন্য জীবনে অনেক কিছু করেন। তাই স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটা সুযোগ তৈরি হয় তার বাবা-মায়ের খেদমত করলে।
২। আপনি আপনার স্বামীর ঘর সংসারের জিম্মাদার। আর আপনার স্বামীর পরিবারের অন্যতম অংশীদার হলেন তার মা-বাবা। স্বামীর সম্পদ, স্বামীর মান-সম্মান, স্বামীর বিশ্বাস-ভালোবাসার আমানত রক্ষা করা ফরজ। সরাসরি তার মা-বাবার খেদমত-যত্ন করা আপনার জন্য ফরজ না হলেও পরোক্ষভাবে তার অমূল্য ধন বাবা-মার দেখাশোনা করা আপনার উপর কোন ভাবেই ফরজ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার সেই জিম্মাদারি রক্ষার স্বার্থে হলেও তার বাবা-মার খেদমত করা উচিত। তার জিম্মাদারি আপনি রক্ষা করতে না পারলে আপনি তার স্ত্রীর মর্যাদা কিভাবে ধরে রাখবেন?
৩। আপনি যদি তার মা-বাবার সেবা করতে না চান তাহলে স্বামীর কর্মস্থলে মা-বাবাকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অথবা মা-বাবার জন্য আলাদা বাসস্থান নির্ধারণ করে দিতে পারেন, সেখানে সন্তান তাদের আলাদাভাবে ভরণপোষণ দিয়ে সেবা যত্ন নিজে গিয়ে করবেন। না হয়তো অন্য কোনো আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে করাবেন। তাহলে আপনার স্বামীর আয়ের একটা অংশ অন্য সংসারে চলে যাচ্ছে। অন্য আত্মীয়-স্বজনের হাতে চলে যাচ্ছে। সেটা যদি না চান তাহলে নিজ হাতেই খেদমত করতে হবে আপনাকে।
৪। সেটাও সম্ভব না হলে আপনার স্বামী তার মা-বাবা যেখানে থাকেন সেখানে চলে যেতে পারেন তাদের খেদমতের স্বার্থেই। সেখান থেকে এসে এসে আপনাদের খোঁজ খবর রাখবেন। আপনাদের সাথে আপনার স্বামী না থেকে মা-বাবার কাছে থাকবে, আপনি দূরে আলাদা থাকবেন। সেটা যদি আপনি মেনে নিতে না পারেন তাহলে আপনার স্বামীর মা-বাবাও যদি তাদের সন্তানকে কাছে থাকতে না পারার বিষয়টা মেনে নিতে না পারে? যেহেতু স্ত্রী হিসেবে আপনার মর্যাদা যেমন, মা-বাবা হিসেবে তাদের মর্যাদাও কোনো অংশে কম নয়। স্বামীর প্রতি আপনার অধিকার যেমন, সন্তানের প্রতি মা-বাবার অধিকারও তো কোন অংশে কম নয়। তাহলে আপনার স্বামী আপনার কাছে থাকবে নাকি তার বাবা-মার কাছে থাকবে? একজন ব্যক্তির দুই দিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই আপনার স্বামীকে কেন্দ্র করে আপনি এবং আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই একত্রে বসবাস করুন।
৫। সেটাও সম্ভব না হলে এক বা একাধিক সেবিকা, কাজের মেয়ে রেখে দিতে পারেন যারা আপনার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা-যত্ন করবেন রান্নাবান্না করে খাওয়াবেন। সেখানে আপনার স্বামীর অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাবে। তখন সে সকল সেবিকাদের সাথে আপনার স্বামীর যোগাযোগ রাখা জরুরি হয়ে পড়বে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে এই সকল সেবিকাদের দ্বারা আপনার স্বামী ফেৎনায় জড়িয়ে যেতে পারে। এজন্য ফেতনার আশঙ্কা থাকা যেহেতু অসম্ভব নয়, তাই সে সকল সেবিকাদের কোন একজনকে আপনার স্বামী স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে মা-বাবার খেদমত করাতে পারেন।
৬। সবচেয়ে ভালো হয় আপনার স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করবেন। তাহলে সে দ্বিতীয় স্ত্রীকে আপনার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কাছে রেখে দিলেন আর আপনি আপনার স্বামীর কাছে থাকলেন। পুরুষদের বলছি- আপনার স্ত্রী আপনার মা বাবার সাথে মিলেমিশে থাকতে না পারলে আপনি দ্বিতীয় বিয়ের পথ বেছে নিবেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে উত্তম মর্যাদা দানের মাধ্যমে আপনার বাবা-মার সাথে থাকার জন্য নসিহত করবেন। তবে এখানে দ্বিতীয় স্ত্রীকেও বাবা-মার খেদমতের শর্ত দিয়ে বিয়ে করা বা তাকে খেদমত করতে বাধ্য করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া শরীয়ত সম্মত হবে না। তবে তাকে বাবা -মার কাছে রেখে দিতে পারেন। নিশ্চয়ই দ্বিতীয় স্ত্রী তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে পরিত্যাগ করার মতো ধ্যান ধারণা সম্পন্ন হবে না। কারণ সবাই সমান হয় না। প্রথম স্ত্রী আলাদাই থাকুক, দ্বিতীয় স্ত্রী বাবা-মার কাছে থাকুক। এ বিষয়টাই ভালো হয়।
৭। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে একজন স্ত্রী কি চায় তার স্বামী বাবা-মার ভরণপোষণ দিবে না? বাবা-মাকে দূরে তাড়িয়ে দিবে? তাদের কাছে থাকবে না? সরাসরি আপনি হয়তো বলবেন- আমি চাইনা। কিন্তু আপনার আচরণ যদি হয় নেতিবাচক তাহলে আপনার স্বামী মা-বাবারকে বঞ্চিত করে তার অস্তিত্ব ও শিকড়কে যেমন অস্বীকার করলো, তেমনি জান্নাত লাভের সুযোগ হারাবে। মা বাবার দুঃখ-কষ্টে আপনার আয় রোজগারে বরকত কমে যাবে। আপনার সন্তানেরা শিখবে কিভাবে আপনি শ্বশুর-শাশুড়িকে বঞ্চিত করেছেন। ঘুরেফিরে আপনার সন্তানরা ঠিক আপনাদের বৃদ্ধকালে সেই ব্যবহারটাই উপহার দিবে, যেটা আপনি আজ আপনার শশুর-শাশুড়ি সাথে করছেন। বিষয়গুলো যদি এরকম না হোক সেটা চান, তাহলে শ্বশুর-শাশুড়িকে কাছেই রাখুন।
৮। শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত, ভরণপোষণ ও কাছে থাকা- এগুলো আপনার পক্ষে সম্ভব না হলে আপনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে তালাক দিয়ে দিন। খোলা তালাক করুন। তারপর অন্যত্র বিয়ে বসুন। দেখুন সেখানে হয়তো এমন হতে পারে শশুর-শাশুড়ি নেই। তাদের আপনার খেদমত, ভরণপোষণ করা লাগছে না। এমন একটা পরিবেশ খুঁজুন। সেটাই বোধহয় আপনার মতন স্ত্রীর জন্য মানানসই হবে।
পুরুষদের বলবো- আপনার স্ত্রী যদি আপনার দুটো হাতের এক হাতকে কেটে, দুটো চোখের এক চোখে উপড়ে ফেলে দিয়ে বাকি এক চোখ, বাকি এক হাত নিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, তাহলে সে আধা মরা জীবন আপনার জন্য সত্যি কষ্টকর। তাই আপনি আপনার স্ত্রীকে অচিরেই তালাক দিয়ে দিন। নিশ্চয়ই পরবর্তীতে এমন কোনো স্ত্রী আপনার ঘরে আসবে যে হবে সত্যিকার অর্থে সতি-স্বাধ্বী রমণী। শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি কর্তব্য পরায়ণ, কোরআন হাদিসের অনুসারী। তাকে আর নানাভাবে বোঝাতে হবে না। সে স্বেচ্ছায় আপনার মা-বাবার সেবা যত্ন ভরণপোষণের মাধ্যমে তার স্বামীর জান্নাত নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবেন। পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎকেও সুগম করবেন।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Amin Blog এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে Amin Blog এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - লেখক ও ব্লগার, Amin Blog
- Get link
- X
- Other Apps
.png)
Comments
Post a Comment